নগর পরিকল্পনাবিদ হয়েও স্পটিফাইতে মীর রাসেল | সময়ের আলো

এসএম আমানূর রহমান | প্রকাশ: রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ৫:৩৮ এএম | প্রকাশিত লিঙ্ক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে মীর রাসেল আহমেদের হওয়ার কথা একজন নগর পরিকল্পনাবিদ। কিন্তু তার বদলে বর্তমানে অডিও মিউজিক জায়েন্ট স্পটিফাইয়ে কাজ করছেন। ডেভেলপার না হয়েও টেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে তার অভিজ্ঞতা জানতে এবং নতুন প্রজন্মকে জানাতে যোগাযোগ করেছিল দৈনিক সময়ের আলো।  নেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে মীর রাসেল আহমেদের স্পটিফাইয়ে এডিটোরিয়াল কো-অর্ডিনেটর হয়ে ওঠার গল্প…

সময়ের আলো : নগর পরিকল্পনাবিদ হয়েও স্পটিফাইতে যোগদান, কীভাবে সম্ভব হলো?

মীর রাসেল : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে ইউসি ব্রাউজারের সঙ্গে পরিচয়। তখন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত গত ৭ বছর ধরে আমি একটা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছি। সেটা হলো লেগে থাকা। আমি টেকনোলজি ভালোবাসতাম, আইসিটি বিষয়কে ভালোবাসতাম। ফলে আমি এ বিষয়গুলোর সঙ্গে লেগে ছিলাম। লেগে থাকার পাশাপাশি নিজের ডেভেলপমেন্টের জন্য সবসময় কাজ করে গেছি। শুরুতেই ইউসি ব্রাউজার এর পর আমি সিঙ্গাপুরের একটি ও ইউএসএর একটি স্টার্টআপের সঙ্গে কাজ করেছি। তার পর সিঙ্গাপুরের গ্যারেনা নামে একটি গেমিং কোম্পানি, ‘সি’ গ্রুপের। ‘সি’ গ্রুপ মূলত সাউথ ইস্ট এশিয়া এবং এশিয়া প্যাসিফিক এই জোনের বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি এবং খুবই ইমার্জিং একটা কোম্পানি। ‘সি’ গ্রুপের অন্যান্য প্রোডাক্ট, সবই আছে। তারা এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোতে জনপ্রিয়। ‘সি’ গ্রুপের গ্যারেনা কোম্পানির সঙ্গে আমি কাজ করি প্রায় ২ বছর এবং এই নভেম্বরের ১ তারিখে স্পটিফাইতে জয়েন করলাম।

সময়ের আলো : স্পটিফাইয়ে যোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাই,

মাঝামাঝি সময়ে। প্রায় দেড় মাস ধরে আমি ইন্টারভিউ দিই। এই দেড় মাসে প্রায় ৫-৬টা ইন্টারভিউ ফেস করতে হয়েছে। একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে। একটা ইন্টারভিউতে পারফরম্যান্স ভালো হলে তারা যখন মনে করে আমি এটার জন্য ফিট, তখনই নেক্সট স্টেপ ফরওয়ার্ড করে। এভাবে কয়েকটা স্টেপ ফরওয়ার্ড করার পরই তারা আমাকে অফার করে। আমার অফারটা ছিল রিলোকেশন অফার। আমার স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যরা আমার সঙ্গে নিতে চাইলে তাদেরসহ আমি রিলোকেট করতে পারব। আমি বর্তমানে দুবাইতে আছি। এই মুহূর্তে আমি স্পটিফাইয়ের অফিসে বসে আছি। এটা আমার জীবনে অনেক বড় একটি পাওয়া। আমি অনেক বেশি গ্রেটফুল।

সময়ের আলো : স্পটিফাই বাংলাদেশ নিয়ে কী ভাবছে?

মীর রাসেল : আমাকে কাজ করতে হবে বাংলা ও সাউথ এশিয়ার মিউজিক নিয়ে মূলত বৈশ্বিক বাংলা ভাষাভাষী স্পটিফাই ব্যবহারকারীদের জন্য কাজ করব। স্পটিফাইয়ের যে অডিও নেটওয়ার্ক এটার যারা ইউজার তারা আসলে কেমন ধরনের অডিও শুনতে পছন্দ করবে তাদেরকে নিয়ে আমার কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ নিয়ে স্পটিফাই অবশ্যই পরিকল্পনা করছে। আপনি গুগল বা ইউটিউবে স্পটিফাইয়ের অ্যাড দেখতে পাচ্ছেন বাংলাদেশে। এর মানে স্পটিফাই চাচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে কাজ করতে। প্রধানত স্পটিফাই দুই ধরনের মানুষদের নিয়ে কাজ করে, ক্রিয়েটির/আর্টিস্ট এবং ইউজার/লিসেনার। দুইটা পার্ট আলাদা আলাদা। স্পটিফাই এখন বাংলাদেশে আর্টিস্ট নিয়েই প্ল্যান করছে এবং লিসেনারদের নিয়েও প্ল্যান করছে। স্পটিফাই বাংলাদেশ নিয়ে ধীরে ধীরে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। তারা বাংলাদেশ মার্কেটে যাত্রা শুরু করছে। মার্কেটকে লোকালাইজ করছে। আর্টিস্টদের সঙ্গে কোলাবোরেশনে যাচ্ছে। কোলাবোরেশনে গিয়ে তাদেরকে এডুকেট করছে, কীভাবে তারা স্পটিফাইতে তাদের কনটেন্ট আপলোড করবে।

সময়ের আলো : ডেভেলপার না হয়েও টেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি, এটা কি অন্যদের জন্যও কোনো বার্তা বহন করে?

মীর রাসেল : বাংলাদেশ থেকে যারা গ্লোবাল কোম্পানিতে চাকরি পায়, রিলোকেট করে, তারা অধিকাংশই কিন্তু ডেভেলপার থাকে। যারা সফটওয়্যার ডেভেলপ করে, কোডিং করে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড হয়তো সিএসই থাকে বা হার্ডকোর কোডিং করে। আমি ডেভেলপার না। আমার ডেভেলপের স্কিল নেই, কোডিং করতেও জানি না। আমার বেসিক স্কিল, ইন্টারনেট স্কিল বা মার্কেটিং গ্রোথ স্কিল, ডিজিটাল মার্কেটিং স্কিল এগুলো দিয়ে আমরা দেশের বাহিরে গিয়ে গ্লোবাল কোম্পানিতে কাজ করছি। এটা আমার এবং বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় পাওয়া। একরাম ভাই স্পটিফাইতে আছেন, নিটল ভাই ফেসবুকে আছেন আমরা ৩ জন ডেভেলপার না। ডেভেলপার না হয়েও আমরা গ্লোবাল কোম্পানিতে কাজ করছি। এ ছাড়া বেশিরভাগই ডেভেলপার। ডেভেলপারের বাইরেও যে বাংলাদেশের মানুষ গ্লোবাল কোম্পানিতে কাজ করছে এটা খুবই ভালো।

সময়ের আলো : তরুণ প্রজন্ম এই পথে এগিয়ে যেতে চাইলে কী করতে হবে?

মীর রাসেল : আমার মনে হয়, যারা এইচএসসি শেষ করেছে বা ইউনিভার্সিটিতে আছে তাদের কী করতে ভালো লাগে সেটা প্রথমে খুঁজে বের করা উচিত। এর পর সেটা নিয়ে স্টাডি করতে হবে, কাজ করতে হবে। ভালো লাগলে সেটার জন্য হার্ডওয়ার্ক করতে হবে। লাইফে কী করতে চান সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। আজ থেকে ৫/১০ বছর পর তারা নিজেকে কোথায় দেখতে চায় সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কী কী করতে হবে সেটা নিজেকে বের করতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষের গন্তব্য ও এগিয়ে চলার কাহিনি ভিন্ন। তাই আমি মনে করি কেউ কাউকে এগিয়ে চলার পথ বেছে নিতে পরামর্শ দিতে পারে না। তাই নিজের ‘টু ডু লিস্ট’ নিজেকেই করতে হবে। সর্বোপরি কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং লেগে থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *