আই জিনিয়াস মীর রাসেল | দৈনিক জনকণ্ঠ

ইন্টারনেট যার নিত্যসঙ্গী ছিল তার সম্বন্ধে আপনজনরা ভ্রু কুচকে একদিন বলেছিল, এই ছেলেকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন ছিল তার। হলো না এই অতিরিক্ত ইন্টারনেট অসক্তির কারণে। আজ মনে হচ্ছে ইন্টারনেটের পেছনে সময় দেয়া একদমই বৃথা যায়নি। রাসেল এখন বিশ্বের অন্যতম বড়ই কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা গ্রুপের স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।

ইউসি ব্রাউজারের বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর তিনি। ইউসির কার্যক্রমের শুরু থেকেই তিনি আছেন। তার এই সফলতা একদিনে আসেনি। একবার প্রথম আলো গ্রামীণফোন ইন্টারনেট উৎসব হয়েছিল। তার বাড়ি হতে কিলো বারো দূরে। নানারকম ঝক্কি ঝামেলা মাথায় নিয়ে সে অংশ নিয়েছিল সে উৎসবে। স্বীকৃতি পেয়ে গেল আই-জিনিয়াস হিসেবে। শুরু হয়ে গেল এগিয়ে চলা। তারপর ২০১২ তে সে আবারও রাজশাহীর আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয়।

রাসেলের জন্ম রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। গ্রামের নাম মিয়াপাড়া। বাবা-মা দুজনেই নিরক্ষর। রাসেল বলেন, মা-বাবা পড়ালেখার জন্য কখনও বলেননি। নিজ চেষ্টায় এগিয়েছি। পাশে ছিল চাচাসহ অন্যরা। স্কুলে রাসেলের রেজাল্ট বরাবরই ভাল ছিল। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় সে জিপিএ ৫ পায়। এসএসসিতেও তার রেজাল্ট জিপিএ ৫। সময়টা ২০১১ সাল। রাসেল যখন রাজশাহী কলেজে ভর্তি হলেন তিনি ভাবতে পরেননি, সামনের দিনগুলো তার জন্য এত কঠিন হবে। রাসেল বলেন, ‘রাজশাহী কলেজে ভর্তি হলাম। মেসে থাকতাম। দুই বেলা খাবারও জুটত না ঠিকমতো। এরই মধ্যে একদিন হলো ডায়রিয়া। ৭ দিন মেডিক্যালের বারান্দায় পড়েছিলাম। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। এই দিনগুলোর কথা আজও ভুলতে পারি না।’

২০১৪ সালে রাসেল ঢাকায় আসেন। ২০১৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে ভর্তি হন। মাস্টার্স এখন তার প্রায় শেষের দিকে। একাডেমিক পড়াশোনায় যতটা মন তার চেয়ে বেশি মনোযোগ ছিল তার তথ্য ও প্রযুক্তির ওপর। এ্যাপস শেয়ারিং এর মাধ্যমে  সাইকেল শেয়ারিং সিস্টেম জোবাইক। জোবাইক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি  সাইকেল সেবা। জো  বাইকের  বাই-সাইকেল সেবা এখন একটি জনপ্রিয় নাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। লক, সোলার প্যানেল, জিপিএস সিস্টেম রয়েছে জোবাইকে। জোবাইকের ক্যাম্পাস লিড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মীর রাসেল। ২০১৩ সালে রাজশাহীতে প্রথম ইন্টারনেট মিডিয়া হিসাবে চালু হয় রাজশাহী এক্সপ্রেস ডট কম। এটির প্রতিষ্ঠাতা মীর রাসেল। অনলাইন পত্রিকা হলেও এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। এখন রাজশাহী বিভাগে সর্বাধিক পঠিত অনলাইন পত্রিকা এটি।

নতুন কিছু শেখার প্রতি রাসেলের তীব্র আগ্রহ। যে কারণে তিনি ছাত্র থাকা অবস্থায়ই শিখে নেন ওয়েবডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম। রেডিও শুনতে রাসেল ভালবাসেন। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল অবধি তিনি রেডিও ক্লাবের দায়িত্বও পালন করেন। রাসেল জানালেন, ‘বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বিবিসি বাংলা, ডয়চে ভেলে, এনএইচকে জাপান, রেডিও তেহরান, ভয়েস অব আমেরিকার শ্রোতাদের অনুষ্ঠানগুলোতে তার সরব উপস্থিতি থাকত। ২০০৯ সালে রাজশাহী বেতারে সেতুবন্ধন নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার সুযোগ পান তিনি। এছাড়া ২০১০ সালে বিবিসি বাংলার সেরা শ্রোতা নির্বাচিত হন তিনি। ইন্টারনেটে বাংলার বিকাশ যেন ঘটে সে জন্য রাসেল গুগুল ট্রান্সলেটের কাজ করেছেন।

বাংলায় প্রযুক্তি বিষয়ক ব্লগেও তিনি লেখালেখি করেন। ছোট বেলায় রাসেল স্বপ্ন দেখতেন তিনি বড় হয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব হবেন। তখন মহাসচিব ছিলেন কফি আনান। কাফি আনান খুব টানত রাসেলকে। স্কুলের রচনায় তিনি লিখেছেন, বড় হয়ে কফি আনান হবেন। এটাই তার জীবনের লক্ষ্য। সময় স্রোতে অনেক কিছু বদলে যায়। বদলে গেছে রাসেলের স্বপ্ন। তিনি বলেন তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে বদলে দিতে হবে। এ জন্য যতটুকু পারি কাজ করব। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই।

প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায়, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *