রাজশাহীর তরুণ কাজ করছেন স্পটিফাইতে | প্রথম আলো
মীর রাসেল আহমেদ বড় হয়েছেন রাজশাহীতে। ছেলেবেলা থেকেই ইন্টারনেটের প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল তাঁর। গ্রামীণফোন ও প্রথম আলো আয়োজিত ইন্টারনেট উৎসবে আই-জিনিয়াস খেতাব পেয়েছিলেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা নিয়ে পড়া এই তরুণ কেমন করে স্পটিফাইয়ের মতো নামী অডিও কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ পেলেন? পড়ুন স্পটিফাইয়ের এডিটোরিয়াল কো-অর্ডিনেটর মীর রাসেল আহমেদ–এর গল্প
প্রথম আলো | স্বপ্ন নিয়ে ডেস্ক | লিঙ্ক | প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬: ২০
এ মুহূর্তে আমি বসে আছি দুবাইয়ের মিডিয়া সিটির একটি অফিসে। জানালা দিয়ে নীল সাগর আর সমুদ্রের বুকে গড়ে ওঠা গাছ আকৃতির পাম জুমেইরাহ এলাকা দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে গান শুনছিলাম। দেখছিলাম আমাদের উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বে এ সপ্তাহে নতুন কোন কোন গান মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি আমি যোগ দিয়েছি বিশ্বের জনপ্রিয় অডিও কোম্পানি স্পটিফাইতে। এটি মূলত একটি ইন্টারনেটভিত্তিক আন্তর্জাতিক মিউজিক ও পডকাস্ট স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। যেখানে ব্যবহারকারীরা ফোন, কম্পিউটার, স্মার্টওয়াচ কিংবা অন্যান্য ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করে বিনা মূল্যে অডিও গান কিংবা পডকাস্ট উপভোগ করতে পারেন।
২০১০ সালে জীবনে প্রথম ঢাকা দেখা এই আমি ২০২৩-এ দুবাই পৌঁছে যাব, কখনো কি ভেবেছিলাম?
প্রথম আলো ও ইন্টারনেট জিনিয়াস
আমার বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। আব্বা রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কয়েকটি হাট থেকে গুড়চাষি কৃষকদের থেকে খেজুর গুড় কিনে ট্রেনে করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতেন। তিনি লিখতে জানেন না। তাই আমাকে সঙ্গে নিতেন চাষিদের স্লিপ লিখে টাকার পরিমাণ হিসাব করে দেওয়ার জন্য।
ফলের কার্টনে খড় ও পুরোনো কাগজের পত্রিকা দিয়ে গুড় প্যাকেটজাত করা হতো। পুরোনো পত্রিকা থেকে আমার পছন্দের পাতাগুলো ছিঁড়ে জমিয়ে রাখতাম। সেগুলো বাড়িতে নিয়ে এসে পড়তাম। সে সময়ই আমার প্রথম আলোর সঙ্গে পরিচয়।
রেডিও শোনা, পত্রিকা পড়া—পড়ালেখার বাইরে এসবই ছিল আগ্রহের জায়গা।
প্রচুর গান শুনতাম। আমাদের এলাকায় সে সময় সংবাদপত্র পাওয়া যেত না। ২০০৯ সালের দিকে পাশের ইউনিয়নের একজন হকারকে অনেক অনুরোধ করে বাড়িতে প্রথম আলো দিতে বলি। বৃত্তির টাকা দিয়ে পত্রিকার বিল দিতাম। কী মধুর সেসব স্মৃতি!
বাংলাদেশ বেতারের আয়োজনে একটা রিয়েলিটি শো হতো। নাম ‘উত্তরণ জিনিয়াস’। এই রিয়্যালিটি শোতে অংশ নিয়ে সারা দেশের হাজারো অংশগ্রহণকারীর মধ্য থেকে সেরা হই। ২০১০ সাল, মাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষার আগের দিন ঢাকার আগারগাঁও যেতে হয়েছিল লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। সেবারই প্রথম আমার রাজধানী দেখা।
বিভিন্ন পুরস্কারের টাকা জমিয়ে একটি জাভা সাপোর্টেড ফোন কিনেছিলাম। সেটা দিয়েই ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। গুগল সার্চ করতাম কারণে–অকারণে। ইন্টারনেট ব্যবহার করাটা কেমন জানি নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল।
কলেজে প্রথম বর্ষে থাকাকালে ‘ইন্টারনেট উৎসব’ নামে একটি প্রতিযোগিতার খবর পাই। স্কুল-কলেজে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ আয়োজন করেছিল গ্রামীণফোন ও প্রথম আলো। ২০১১ সালে আমার উপজেলা বাঘায় সে উৎসব থেকে আমি ‘আই-জিনিয়াস’ নির্বাচিত হই। প্রথম আলোয় আমার ছবি আসে, ঢাকায় জিপি হাউসে গ্র্যান্ড ফিনালেতে অংশ নেওয়ার সুযোগও পাই। ২০১২ সালেও রাজশাহী সদরে আমি দ্বিতীয়বারের মতো ইন্টারনেট জিনিয়াস হয়েছিলাম।
নিজে নিজে শেখা
২০১৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে কলেজ শেষ করেও খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। কারণ, আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সামর্থ্য পরিবারের ছিল না। নানা জায়গায় কাজের সুযোগ খুঁজতে খুঁজতেই এক বছর কেটে গেল।
খুব ভেঙে পড়েছিলাম। হতাশা জেঁকে বসেছিল। আব্বাকে বলে অনেক কষ্টে কম টাকায় একটি পুরোনো ল্যাপটপ কিনে ফেলি সে সময়। তখন রাজশাহীতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ছিল না।
ঢাকায় চলে আসি। আমার এক মামা, মো. শামসুজ্জামান সে সময় তাঁর বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এই মানুষটির কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। মামার বাসায় ইন্টারনেট ছিল। হতাশা ঝেড়ে নতুনভাবে শুরু করি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতি। সেই সঙ্গে চলছিল ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখা।
খুব চেয়েছিলাম কম্পিউটার–সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে পড়ব। সুযোগ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভর্তি হই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি সে সময় ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দক্ষতা আয়ত্ত করতে শুরু করি। অল্প কিছু ডলারও আয় হচ্ছিল তখন।
আমার পড়ালেখার বিষয়ের সঙ্গে কোডিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, এসবের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবু, যেখান থেকে পারি, যেভাবে পারি শিখেছি।
‘রাজশাহী এক্সপ্রেস’ নামে রাজশাহীকেন্দ্রিক একটি ইন্টারনেট মিডিয়া চালু করি সে সময়। তৈরি করি ছোট্ট একটা দল। উইকিপিডিয়া, গুগল ম্যাপ, গুগল ট্রান্সলেট, নানা জায়গায় প্রদায়ক হিসেবে কাজ করতাম তখন।
২০১৬ সালের কোনো একদিনের কথা। ফেসবুক ব্রাউজ করছিলাম, হঠাৎ চোখে পড়ল, ইউসি ব্রাউজারের ফেসবুক পেজ থেকে বাংলাদেশ নিয়ে একটি পোস্ট করা হয়েছে। কৌতূহলী হয়ে পেজে মেসেজ করে বসলাম। লিখলাম, ‘আপনারা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন জেনে খুব ভালো লাগছে। আমি নিয়মিত ইউসি ব্রাউজার ব্যবহার করি। এ যাত্রায় যদি কোনোভাবে আপনাদের সাহায্য করতে পারি, তাহলে ভালো লাগবে।’ কয়েক দিন পরই ফিরতি বার্তায় আমার সিভি চাওয়া হলো!
দেশে বসে বিদেশের কাজ
সে সময় আমার কোনো সিভি ছিল না। তড়িঘড়ি করে গুগল থেকে শিখে নিয়েছিলাম, কীভাবে সিভি বানাতে হয়, কী কী থাকতে হয়। দু-এক দিনের মধ্যে সিভি পাঠিয়ে দিলাম। ফিরতি বার্তা এল পরদিনই। তাঁরা আমার সিভি পছন্দ করেছেন এবং আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চান!
এরপর সাক্ষাৎকার পর্ব হলো। কাজও করতে শুরু করলাম। তখন আমার খুব বেশি দক্ষতা ছিল না। যেসব কাজ পারতাম সেগুলো করতাম। না পারলে ইন্টারনেট ঘেঁটে শিখে ফেলতাম। তাঁরাও খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আমাকে সাহায্য করেছেন। এভাবে কাজ করেছি প্রায় চার বছর। ভালো কাজের জন্য আমি ইউসি ব্রাউজার বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূত উপাধিও পেয়েছিলাম।
বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের জন্য আলাদাভাবে ইউসি নিউজ, ইউসি ক্রিকেট এবং অন্যান্য স্থানীয় সেবা চালু করেছিলাম আমরা। অনেক স্মৃতিই এখনো চোখে ভাসে।
এরপর একে একে নানা উদ্যোগ, নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছি। ক্লাসের পড়া সামলে এত কিছু করতে কত যে পরিশ্রম করতে হতো! তবু জাহাঙ্গীরনগরে একটা অসাধারণ সময় কেটেছে।
২০১৯ সালে দেশে বসেই সিঙ্গাপুরের একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করি। ব্লকচেইন, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডিসেন্ট্রাইলাইজড ফিন্যান্স নিয়ে কাজ করত তারা। সেখান থেকে আমার এই উদীয়মান খাত সম্পর্কে ধারণা হয়। ডিজিটাল মুদ্রা বা ডিজিটাল কারেন্সি যে ভবিষ্যতের একটি বড় উপাদান হয়ে উঠবে, সেটা বুঝতে পারি। পরে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান সি-গ্রুপের গেম পাবলিশার ও ডেভেলপার ‘গ্যারেনা’তেও কাজ করেছি।
দক্ষতাই শক্তি
স্পটিফাইতে আমার পদবি ‘এডিটোরিয়াল কো-অর্ডিনেটর’। আমি গ্লোবাল মিউজিক টিমের একজন সদস্য। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সংগীতের বাজার নিয়ে আমার কাজ। এ অঞ্চলের ব্যবহারকারীরা ঠিক কোন ধরনের মিউজিক বা অডিও শুনতে চান, বিভিন্ন উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমাকে সেটা বুঝতে হয়।
আমি সব সময় চেষ্টা করেছি নিজের ইচ্ছাগুলোকে প্রাধান্য দিতে, ‘ডিজিটাল’ বিষয়টা বুঝতে, দক্ষতা বাড়াতে।
অনেক সময় মনে হতো, আমি যেসব নিয়ে কাজ করি, এটি একটি অনিশ্চিত ক্ষেত্র। কখনো ভালো কিছু করতে পারব কি না, কে জানে! এসব ভেবে কখনো কখনো বিসিএস কিংবা একটি নবম গ্রেডের চাকরির কথাও ভেবেছি। কিন্তু সে পথে আর হাঁটা হয়নি।
আমি মনে করি,
ইন্টারনেট একটা বড় শক্তি। এখান থেকে যে কেউ নিজে নিজে শিখতে পারে, স্বপ্নের চেয়েও উঁচু স্থানে পৌঁছতে পারে। প্রয়োজন শুধু পরিশ্রম আর ধৈর্য।
Mir Rasel: The Young Digital Marketing Expert | The Daily Star
Published on The Daily Star, Fri Jul 5, 2019 12:00 AM
24 year old Mir Rasel from Bagha Upazila, Rajshahi is currently completing his final year at Jahangirnagar University (JU), in Urban and Regional Planning. He did not have access to early education and credits his uncle for playing a major role in shaping his life. Nominated as Rajshahi’s Genius twice, he was always enthusiastic about information and technology alongside institutional education.
In 2013, Mir Rasel established the website rajshahiexpress.com, the first internet media of the division where he had compiled all information related to Rajshahi in one portal. “With increasing access to the internet, people can visit our online newspaper for all headlines revolving around Rajshahi,” expresses Rasel.
As a digital specialist at Alibaba Group, one of the largest e-commerce platforms worldwide, Rasel remotely worked with product operations, branding and the marketing team, and was responsible for social media management, including Facebook content planning. He organised numerous online campaigns for Bangladesh, India, Indonesia, Pakistan and Vietnam, to attract visitors
“Alibaba helped me foster my marketing skills, as I did in-depth research on target groups and devised ways to integrate local and international cultures,” explains Rasel. He is also the Brand Ambassador for UC Browser, and has built users’ communities in various universities as a community leader. He also helped UC Browser launch their first TVC in Bangladesh, which is recognized as one of the most successful campaigns in the country.
Furthermore, the young digital marketing expert played a major role in the execution of Jobike, the country’s first bicycle sharing startup at the JU campus. While working as the campus lead, he monitored the operations and sales for the company. Rasel has also written a number of technical blogs on a variety of subjects which were self-taught with help from the internet. His other ventures include Dokandars, an e-commerce platform which aims to provide quality products at lowered prices and BD Places, a travel vlog based website.
In order to pursue his dreams, Rasel wishes to go to China with a scholarship for further studies in the field of digital business. After that, he intends to come back to Bangladesh and work in the agricultural development sector.
Read another article from Prothom Alo, published in 2023.
নগর পরিকল্পনাবিদ হয়েও স্পটিফাইতে মীর রাসেল | সময়ের আলো
এসএম আমানূর রহমান | প্রকাশ: রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ৫:৩৮ এএম | প্রকাশিত লিঙ্ক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে মীর রাসেল আহমেদের হওয়ার কথা একজন নগর পরিকল্পনাবিদ। কিন্তু তার বদলে বর্তমানে অডিও মিউজিক জায়েন্ট স্পটিফাইয়ে কাজ করছেন। ডেভেলপার না হয়েও টেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে তার অভিজ্ঞতা জানতে এবং নতুন প্রজন্মকে জানাতে যোগাযোগ করেছিল দৈনিক সময়ের আলো। নেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে মীর রাসেল আহমেদের স্পটিফাইয়ে এডিটোরিয়াল কো-অর্ডিনেটর হয়ে ওঠার গল্প…
সময়ের আলো : নগর পরিকল্পনাবিদ হয়েও স্পটিফাইতে যোগদান, কীভাবে সম্ভব হলো?
মীর রাসেল : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে ইউসি ব্রাউজারের সঙ্গে পরিচয়। তখন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত গত ৭ বছর ধরে আমি একটা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছি। সেটা হলো লেগে থাকা। আমি টেকনোলজি ভালোবাসতাম, আইসিটি বিষয়কে ভালোবাসতাম। ফলে আমি এ বিষয়গুলোর সঙ্গে লেগে ছিলাম। লেগে থাকার পাশাপাশি নিজের ডেভেলপমেন্টের জন্য সবসময় কাজ করে গেছি। শুরুতেই ইউসি ব্রাউজার এর পর আমি সিঙ্গাপুরের একটি ও ইউএসএর একটি স্টার্টআপের সঙ্গে কাজ করেছি। তার পর সিঙ্গাপুরের গ্যারেনা নামে একটি গেমিং কোম্পানি, ‘সি’ গ্রুপের। ‘সি’ গ্রুপ মূলত সাউথ ইস্ট এশিয়া এবং এশিয়া প্যাসিফিক এই জোনের বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি এবং খুবই ইমার্জিং একটা কোম্পানি। ‘সি’ গ্রুপের অন্যান্য প্রোডাক্ট, সবই আছে। তারা এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোতে জনপ্রিয়। ‘সি’ গ্রুপের গ্যারেনা কোম্পানির সঙ্গে আমি কাজ করি প্রায় ২ বছর এবং এই নভেম্বরের ১ তারিখে স্পটিফাইতে জয়েন করলাম।
সময়ের আলো : স্পটিফাইয়ে যোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাই,
মাঝামাঝি সময়ে। প্রায় দেড় মাস ধরে আমি ইন্টারভিউ দিই। এই দেড় মাসে প্রায় ৫-৬টা ইন্টারভিউ ফেস করতে হয়েছে। একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে। একটা ইন্টারভিউতে পারফরম্যান্স ভালো হলে তারা যখন মনে করে আমি এটার জন্য ফিট, তখনই নেক্সট স্টেপ ফরওয়ার্ড করে। এভাবে কয়েকটা স্টেপ ফরওয়ার্ড করার পরই তারা আমাকে অফার করে। আমার অফারটা ছিল রিলোকেশন অফার। আমার স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যরা আমার সঙ্গে নিতে চাইলে তাদেরসহ আমি রিলোকেট করতে পারব। আমি বর্তমানে দুবাইতে আছি। এই মুহূর্তে আমি স্পটিফাইয়ের অফিসে বসে আছি। এটা আমার জীবনে অনেক বড় একটি পাওয়া। আমি অনেক বেশি গ্রেটফুল।
সময়ের আলো : স্পটিফাই বাংলাদেশ নিয়ে কী ভাবছে?
মীর রাসেল : আমাকে কাজ করতে হবে বাংলা ও সাউথ এশিয়ার মিউজিক নিয়ে মূলত বৈশ্বিক বাংলা ভাষাভাষী স্পটিফাই ব্যবহারকারীদের জন্য কাজ করব। স্পটিফাইয়ের যে অডিও নেটওয়ার্ক এটার যারা ইউজার তারা আসলে কেমন ধরনের অডিও শুনতে পছন্দ করবে তাদেরকে নিয়ে আমার কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ নিয়ে স্পটিফাই অবশ্যই পরিকল্পনা করছে। আপনি গুগল বা ইউটিউবে স্পটিফাইয়ের অ্যাড দেখতে পাচ্ছেন বাংলাদেশে। এর মানে স্পটিফাই চাচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে কাজ করতে। প্রধানত স্পটিফাই দুই ধরনের মানুষদের নিয়ে কাজ করে, ক্রিয়েটির/আর্টিস্ট এবং ইউজার/লিসেনার। দুইটা পার্ট আলাদা আলাদা। স্পটিফাই এখন বাংলাদেশে আর্টিস্ট নিয়েই প্ল্যান করছে এবং লিসেনারদের নিয়েও প্ল্যান করছে। স্পটিফাই বাংলাদেশ নিয়ে ধীরে ধীরে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। তারা বাংলাদেশ মার্কেটে যাত্রা শুরু করছে। মার্কেটকে লোকালাইজ করছে। আর্টিস্টদের সঙ্গে কোলাবোরেশনে যাচ্ছে। কোলাবোরেশনে গিয়ে তাদেরকে এডুকেট করছে, কীভাবে তারা স্পটিফাইতে তাদের কনটেন্ট আপলোড করবে।
সময়ের আলো : ডেভেলপার না হয়েও টেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি, এটা কি অন্যদের জন্যও কোনো বার্তা বহন করে?
মীর রাসেল : বাংলাদেশ থেকে যারা গ্লোবাল কোম্পানিতে চাকরি পায়, রিলোকেট করে, তারা অধিকাংশই কিন্তু ডেভেলপার থাকে। যারা সফটওয়্যার ডেভেলপ করে, কোডিং করে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড হয়তো সিএসই থাকে বা হার্ডকোর কোডিং করে। আমি ডেভেলপার না। আমার ডেভেলপের স্কিল নেই, কোডিং করতেও জানি না। আমার বেসিক স্কিল, ইন্টারনেট স্কিল বা মার্কেটিং গ্রোথ স্কিল, ডিজিটাল মার্কেটিং স্কিল এগুলো দিয়ে আমরা দেশের বাহিরে গিয়ে গ্লোবাল কোম্পানিতে কাজ করছি। এটা আমার এবং বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় পাওয়া। একরাম ভাই স্পটিফাইতে আছেন, নিটল ভাই ফেসবুকে আছেন আমরা ৩ জন ডেভেলপার না। ডেভেলপার না হয়েও আমরা গ্লোবাল কোম্পানিতে কাজ করছি। এ ছাড়া বেশিরভাগই ডেভেলপার। ডেভেলপারের বাইরেও যে বাংলাদেশের মানুষ গ্লোবাল কোম্পানিতে কাজ করছে এটা খুবই ভালো।
সময়ের আলো : তরুণ প্রজন্ম এই পথে এগিয়ে যেতে চাইলে কী করতে হবে?
মীর রাসেল : আমার মনে হয়, যারা এইচএসসি শেষ করেছে বা ইউনিভার্সিটিতে আছে তাদের কী করতে ভালো লাগে সেটা প্রথমে খুঁজে বের করা উচিত। এর পর সেটা নিয়ে স্টাডি করতে হবে, কাজ করতে হবে। ভালো লাগলে সেটার জন্য হার্ডওয়ার্ক করতে হবে। লাইফে কী করতে চান সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। আজ থেকে ৫/১০ বছর পর তারা নিজেকে কোথায় দেখতে চায় সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কী কী করতে হবে সেটা নিজেকে বের করতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষের গন্তব্য ও এগিয়ে চলার কাহিনি ভিন্ন। তাই আমি মনে করি কেউ কাউকে এগিয়ে চলার পথ বেছে নিতে পরামর্শ দিতে পারে না। তাই নিজের ‘টু ডু লিস্ট’ নিজেকেই করতে হবে। সর্বোপরি কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং লেগে থাকতে হবে।
ছাত্রাবস্থায় বিশ্বখ্যাত আলীবাবা গ্রুপের ডিজিটাল স্পেশালিস্ট | একুশে টিভি
প্রকাশিত হয়েছে একুশে টিভি অনলাইন পোর্টালে | প্রকাশিত : ১৬:২১, ২৮ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৭:২৩, ১ জুন ২০১৯
রাজশাহী শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বাঘা উপজেলার বাউসা মিয়াপাড়া গ্রামে জন্ম মীর রাসেল আহমেদের। ঠিক কবে সে জন্মগ্রহণ করেছে তা তার বাবা-মা কেউ ঠিক করে বলতে পারেন না। মা শুধু বলতে পারেন তার জন্ম ফাল্গুন মাসের ২১ বা ২২ তারিখ হবে হয়তো। বাবা-মা দু’জনেরই অক্ষর জ্ঞান নেই। বাবার গ্রাম্য ব্যবসাতেই চলতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। রাসেলের বাবা-মা পড়ালেখা না জানায় চাচার কাছে সে হাতে খড়ি নিয়েছে।
ছোট বেলায় গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি হয় রাসেল। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে রাসেল বলেন, ‘যতটুকু মনে পড়ে বাবা-মা কোনোদিন আমাকে পড়তে বসতে বলেননি। নিজের ইচ্ছাতেই পড়তে বসতাম, নিয়মিত স্কুলে যেতাম। প্রতিবারই স্কুলে ৩য় কিংবা ৪র্থ হতাম। যার কারণে বাবা-মার একটা বিশ্বাস আর আশা জন্মেছিল আমার উপরে।’
দেশে প্রথমবারের মত ২০০৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সে অংশগ্রহণ করে। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায় জিপিএ ৫ পেয়েছে রাসেল। কিছু দিন পরে বৃত্তির ফলাফলেও দেখা যায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়ছে সে। এর পর হাই স্কুলে ভর্তি হন। আর অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় সে। তারপর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সেখানেও তুলে নেন জিপিএ ৫। এবার তার কলেজে ভর্তি হওয়ার পালা। তার ইচ্ছে ছিলো ভালো কলেজে পড়বে। স্বপ্ন ছিলো রাজশাহী কলেজে ভর্তি হবে। কিন্তু বাবা তাকে রাজশাহী পড়াবেন না। কারণ তার চিন্তা তিনি ঠিকমত খরচ বহন করতে পারবেন না। এরপর সে পরিবারকে ম্যানেজ করে ভর্তি হয় রাজশাহী কলেজে। প্রথমবারের মত বাবা-মাকে ছেড়ে শহরে যাত্রা শুরু হয় রাসেলের।
রাসেল বলেন, ‘২০১১ সালে কলেজ ভর্তি হওয়ার পর রাজশাহী শহরে অনেক সংগ্রাম করেছি। মেসে থাকতাম। খাবার ভালো ছিলো না, ঠিকমত খাবার পেতাম না। একবার ডায়রিয়া হয়ে রাজশাহী মেডিকেলের বারান্দায় শুয়ে ছিলাম ৭ দিন। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ঘুরে এসেছি। বিষয়টি মনে পড়লে এখনোও ভয়ে থমকে উঠি।’
তিনি বলেন, ‘কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে স্বপ্ন হয়েছিলো বুয়েটে পড়বো। সে হিসেবেই আগাচ্ছিলাম। কিন্তু অধিক পরিমাণ ইন্টারনেট আসক্তি আমার অবস্থান থেকে দূরে ঠেলে দেয়। ২০১১-১২ সালে প্রতিদিন গড়ে ১১-১২ ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। একটার পর একটা গুগল করতাম, কারণে কিংবা অকারণে। কলেজে শিক্ষকদের কোনো প্রশ্ন করতাম না, যা করার গুগলকেই করতাম।
রাসেল বলেন, ‘নিয়মিত পত্রিকা পড়তাম। পত্রিকা মারফত জানলাম গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব হবে। সেবার বাঘাতে উৎসব হয়েছিলো। আমার গ্রামের বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে। অনেক আশা আর উৎসাহ নিয়ে রাজশাহী থেকে বাঘায় যাই। অনেক জটিলতা শেষ করে সুযোগ পাই ইন্টারনেট উৎসবে অংশ নেওয়ার। ১০-১২ ঘণ্টা করে ইন্টারনেট ব্রাউজিং বৃথা হলো না! নির্বাচিত হলাম রাজশাহীর আইজিনিয়াস হিসেবে। প্রথম আলোতে সে সময় ছবি ছাপা হয়েছিলো। এরপরে ২০১২ সালেও রাজশাহীতে ইন্টারনেট উৎসব হয়। তখনও দ্বিতীয় বারের মত রাজশাহী থেকে আইজিনিয়াস নির্বাচিত হয়েছিলাম।’
এর পর এইচএসসির ফলাফল প্রকাশিত হয় রাসেলের। একটি বিষয় ছাড়া অন্য সবগুলোতে এ + পায় সে। বুয়েটে পড়ার লালিত স্বপ্নটা সেখানেই ভেঙ্গে যায় তার। ভর্তি হওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং ছেড়ে দেয় সে। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটি বিভাগের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে রাসেল।
২০১৪ সালে প্রথমবারের মত ঢাকায় পাড়ি জমায় সে। কিন্তু ঢাবিতে সুযোগ হয়নি। ভর্তির সুযোগ পায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে। বর্তমানে এই বিভাগেয় মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রাসেল। শুধু একাডেমিক পড়াশুনায় ব্যাস্ত থাকেনি সে, তথ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে রাসেল সবসময়ই অনেক বেশি উৎসাহী ছিলো।
রাসেল এখন বিশ্বের অন্যতম বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চীনের আলিবাবা গ্রুপের ডিজিটাল স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। শুধু তাই নয়, সে ইউসি ব্রাউজারের কার্যক্রমের প্রথম থেকেই ইউসি ব্রাউজারের বাংলাদেশের ব্রান্ড এম্বাসেডর হিসেবেও কাজ করে আসছেন।
তথ্য প্রযুক্তি যে মানুষের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে তার অনন্য উদাহরণ রাসেল। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধা করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে তার মাধ্যমে চালু হয়েছে এ্যাপসের মাধ্যমে সাইকেল শেয়ারিং সিস্টেম জো-বাইক। ছেলে-মেয়ে উভয়ের ব্যবহার উপযোগী স্মার্ট বাইসাইকেল জো-বাইকে এ্যাপসের মাধ্যমে অত্যাধুনিক লক, সোলার প্যানেল, জিপিএস সিস্টেম ইত্যাদি রয়েছে।
এসব সাইকেলের লক খোলার জন্য দরকার হয় একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। অ্যাপ ডাউনলোড করে, অ্যাকাউন্ট খুলে সাইকেলের সঙ্গে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে সাইকেলটি ব্যবহার করা যায়। জো-বাইকের ক্যাম্পাস লিড হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন রাসেল।
রাসেল একুশে টিভি অনলাইনকে জানান, সে কখনোও সময় অপচয় করেনি। ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কেটেছে রেডিও, পত্রিকা আর আমার রেডিও ক্লাব নিয়ে। রেডিও ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন রাসেল। এরপর ২০১১ থেকে ১২ সাল পড়াশোনা ছাড়া পুরো সময়টা কেটেছে তার গুগলের সঙ্গে। আর তাইতো সে ২০১৩ সালে রাজশাহীর প্রথম ইন্টারনেট মিডিয়া হিসেবে চালু করেন ‘রাজশাহী এক্সপ্রেস ডট কম’ নামে একটি অনলাইন পত্রিকা। যা এখন রাজশাহী বিভাগ কেন্দ্রিক সর্বাধিক পঠিত অনলাইন পত্রিকা। পাড়ালেখা করা অবস্থায়ই WHM, Cpanel ম্যানেজমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট ও ডিজিটাল মিডিয়ার কাজ শিখে ফেলেন রাসেল। প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ ছাড়াও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবরে ডুবে থাকতেন রাসেল।
রাসেল বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অনেক রেডিও শুনেছি। স্কুল লাইফে দেশি এবং আন্তর্জাতিক অনেক রেডিওর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে আমার। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বিবিসি বাংলা, ডয়েচে ভেলে জার্মানি, এনএইচকে জাপান, সিআরআই চায়না, রেডিও তেহরান, ভয়েস অফ আমেরিকা। যার কারণে ২০০৯ সালে রাজশাহী বেতারে ‘সেতুবন্ধন’ নামে একটি রেডিও অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করার সুযোগ হয় আমার। ২০১০ সালে সেরা শ্রোতা হিসেবে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগ হয়েছিলো বিবিসি বাংলায়।’
পড়ালেখা করা অবস্থায় এতদূর এগিয়ে যাওয়া রাসেলের জীবনের লক্ষ্য এখন তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে বদলে দেওয়া।
নিজের স্বপ্ন নিয়ে রাসেল বলেন- ‘তখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম। সামনে পিএসসি আর বৃত্তি পরীক্ষা। বাড়িতে একটা রেডিও ছিলো। অনেক রেডিও শুনতাম। বিশেষ করে খবর। সেসময় জাতিসংঘের মহাসচিব ছিলেন কফি আনান। তাকে দেখে আমার ইচ্ছে হয়েছিল জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়ার। স্কুলে যতবার রচনা এসেছে ‘জীবনের লক্ষ্য’, ততবারই লিখেছি বড় হয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব হবো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নও বদলে গেছে। এখন স্বপ্ন দেখি তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে বদলে দিতে। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চাই।’
এসএ/
আই জিনিয়াস মীর রাসেল | দৈনিক জনকণ্ঠ
ইন্টারনেট যার নিত্যসঙ্গী ছিল তার সম্বন্ধে আপনজনরা ভ্রু কুচকে একদিন বলেছিল, এই ছেলেকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন ছিল তার। হলো না এই অতিরিক্ত ইন্টারনেট অসক্তির কারণে। আজ মনে হচ্ছে ইন্টারনেটের পেছনে সময় দেয়া একদমই বৃথা যায়নি। রাসেল এখন বিশ্বের অন্যতম বড়ই কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা গ্রুপের স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।
ইউসি ব্রাউজারের বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর তিনি। ইউসির কার্যক্রমের শুরু থেকেই তিনি আছেন। তার এই সফলতা একদিনে আসেনি। একবার প্রথম আলো গ্রামীণফোন ইন্টারনেট উৎসব হয়েছিল। তার বাড়ি হতে কিলো বারো দূরে। নানারকম ঝক্কি ঝামেলা মাথায় নিয়ে সে অংশ নিয়েছিল সে উৎসবে। স্বীকৃতি পেয়ে গেল আই-জিনিয়াস হিসেবে। শুরু হয়ে গেল এগিয়ে চলা। তারপর ২০১২ তে সে আবারও রাজশাহীর আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয়।
রাসেলের জন্ম রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। গ্রামের নাম মিয়াপাড়া। বাবা-মা দুজনেই নিরক্ষর। রাসেল বলেন, মা-বাবা পড়ালেখার জন্য কখনও বলেননি। নিজ চেষ্টায় এগিয়েছি। পাশে ছিল চাচাসহ অন্যরা। স্কুলে রাসেলের রেজাল্ট বরাবরই ভাল ছিল। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় সে জিপিএ ৫ পায়। এসএসসিতেও তার রেজাল্ট জিপিএ ৫। সময়টা ২০১১ সাল। রাসেল যখন রাজশাহী কলেজে ভর্তি হলেন তিনি ভাবতে পরেননি, সামনের দিনগুলো তার জন্য এত কঠিন হবে। রাসেল বলেন, ‘রাজশাহী কলেজে ভর্তি হলাম। মেসে থাকতাম। দুই বেলা খাবারও জুটত না ঠিকমতো। এরই মধ্যে একদিন হলো ডায়রিয়া। ৭ দিন মেডিক্যালের বারান্দায় পড়েছিলাম। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। এই দিনগুলোর কথা আজও ভুলতে পারি না।’
২০১৪ সালে রাসেল ঢাকায় আসেন। ২০১৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে ভর্তি হন। মাস্টার্স এখন তার প্রায় শেষের দিকে। একাডেমিক পড়াশোনায় যতটা মন তার চেয়ে বেশি মনোযোগ ছিল তার তথ্য ও প্রযুক্তির ওপর। এ্যাপস শেয়ারিং এর মাধ্যমে সাইকেল শেয়ারিং সিস্টেম জোবাইক। জোবাইক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি সাইকেল সেবা। জো বাইকের বাই-সাইকেল সেবা এখন একটি জনপ্রিয় নাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। লক, সোলার প্যানেল, জিপিএস সিস্টেম রয়েছে জোবাইকে। জোবাইকের ক্যাম্পাস লিড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মীর রাসেল। ২০১৩ সালে রাজশাহীতে প্রথম ইন্টারনেট মিডিয়া হিসাবে চালু হয় রাজশাহী এক্সপ্রেস ডট কম। এটির প্রতিষ্ঠাতা মীর রাসেল। অনলাইন পত্রিকা হলেও এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। এখন রাজশাহী বিভাগে সর্বাধিক পঠিত অনলাইন পত্রিকা এটি।
নতুন কিছু শেখার প্রতি রাসেলের তীব্র আগ্রহ। যে কারণে তিনি ছাত্র থাকা অবস্থায়ই শিখে নেন ওয়েবডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম। রেডিও শুনতে রাসেল ভালবাসেন। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল অবধি তিনি রেডিও ক্লাবের দায়িত্বও পালন করেন। রাসেল জানালেন, ‘বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বিবিসি বাংলা, ডয়চে ভেলে, এনএইচকে জাপান, রেডিও তেহরান, ভয়েস অব আমেরিকার শ্রোতাদের অনুষ্ঠানগুলোতে তার সরব উপস্থিতি থাকত। ২০০৯ সালে রাজশাহী বেতারে সেতুবন্ধন নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার সুযোগ পান তিনি। এছাড়া ২০১০ সালে বিবিসি বাংলার সেরা শ্রোতা নির্বাচিত হন তিনি। ইন্টারনেটে বাংলার বিকাশ যেন ঘটে সে জন্য রাসেল গুগুল ট্রান্সলেটের কাজ করেছেন।
বাংলায় প্রযুক্তি বিষয়ক ব্লগেও তিনি লেখালেখি করেন। ছোট বেলায় রাসেল স্বপ্ন দেখতেন তিনি বড় হয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব হবেন। তখন মহাসচিব ছিলেন কফি আনান। কাফি আনান খুব টানত রাসেলকে। স্কুলের রচনায় তিনি লিখেছেন, বড় হয়ে কফি আনান হবেন। এটাই তার জীবনের লক্ষ্য। সময় স্রোতে অনেক কিছু বদলে যায়। বদলে গেছে রাসেলের স্বপ্ন। তিনি বলেন তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে বদলে দিতে হবে। এ জন্য যতটুকু পারি কাজ করব। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই।
প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায়, ১৯ নভেম্বর ২০১৯